বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রহমতের মাস রমজান: কিয়ামুল লাইল

ইসলামী জীবন, ফাইল ছবি।

ইসলামি জীবন:

বরকতময় রমজান মাসের অন্যতম প্রধান আমল হলো দিনে রোজা রাখা আর রাতে নামাজ আদায় করা। রুহানিয়্যাতের আলোকমালায় পরিপূর্ণ রমজান মাসে রোজা, নামাজের উৎকৃষ্ট পরিস্থিতি যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনি তেলাওয়াত, জিকির, দান, সাদাকা ইত্যাদি বহুবিধ কল্যাণকর আমলের অনুপ্রেরণা জাগ্রত হয়। রমজান মাসেই রয়েছে রাতের বিশেষ নামাজ কিয়ামুল লাইল, তারাবিহ। তদুপরি তাহাজ্জুদ, সালাতুল তাসবিহ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন ইত্যাদি বহুবিধ নফল-সুন্নত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অন্যান্য মাসের চেয়ে বহুগুণ সাওয়াব লাভের সুযোগ ঘটে রমজান মাসে। বিশেষত ‘কিয়ামুল লাইল’ বা রাতের নামাজ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো পালনের ক্ষেত্রে রমজান মাসে অধিক তৎপর ও মনোযোগী হওয়া দরকার।

কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে:

১. তাদের পার্শ্বসমূহ বিছানা থেকে আলাদা হয় (অর্থাৎ ঘুম থেকে উঠা), তারা তাদের প্রতিপালককে ডাকে ভয়ে ও প্রত্যাশা সহকারে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে (সুরা আস সাজদা: আয়াত ১৬)।

২. যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন অংশে সিজদা ও দাঁড়ানো অবস্থায় অনুগত থাকে, আখেরাতকে ভয় করে এবং তাঁর প্রতিপালকের দয়া প্রত্যাশা করে, সে কি (তার সমান, যে তা করে না)? আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? কেবল বুদ্ধিমানরাই উপদেশ গ্রহণ করে (সুরা আয যুমার: আয়াত ৯)।

৩. আর রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ আদায় করবে, ইহা তোমার জন্যে অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন (সুরা বনী ইসরাঈল: আয়াত ৭৯)।

৪. হে বস্ত্রাবৃত, রাতের কিছু অংশ ব্যতীত জাগরণ করো। রাতের অর্ধাংশ অথবা তদাপেক্ষা অল্প সময়, অথবা তদাপেক্ষা বেশি সময়। আর কোরআন তেলাওয়াত করো ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে (সুরা মুযযাম্মিল: আয়াত ১-৪)।

৫. তারা রাতের কম সময় ঘুমিয়ে থাকে এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে (সুরা আয যারিয়াত: ১৭)।

৬. তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (তারা) ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ও দানশীল এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৬-১৭)।

কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে আল হাদিসে বর্ণিত আছে:

১. হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ সালাত (নামাজ) সূচনা করতেন দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে (মুসলিম)।

২. হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাত্রি জাগরণ করো, কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল। এটি তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্যে পৌঁছে দেবে। এটি তোমাদের গোনাহ মাফের উপায়, পাপ থেকে দূরে রাখার মাধ্যম এবং শরীরের রোগ দূরকারী (তিরমিজি)।

৩. হযরত মাসরুক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন কাজটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিল? তিনি বলেন, যে কাজ সদাসর্বদা করা হয়। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি রাতের ইবাদতে তাহাজ্জুদের জন্যে কখন উঠতেন? তিনি বললেন, যখন মোরগ ডাকার শব্দ শুনতেন তখন তিনি তাহাজ্জুদের সালাতের (নামাজের) জন্য উঠতেন (বোখারি ও মুসলিম)।

৪. হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় রাতের ভেতরে এমন একটি সময় আছে, যদি কোনো মুসলিম ঐ সময়টি পায়, আর তখন দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ হতে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দেন। আর এ সময়টা প্রতি রাতেই আসে (মুসলিম)।

৫. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন স্বয়ং আমাদের প্রতিপালক দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলতে থাকেন, কে আছ, যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছ, আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেবো। কে আছ, যে এ সময় আমার কাছে গোনাহ হতে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। (বোখারি ও মুসলিম)

বস্তুত পক্ষে, আধ্যাত্মিকতা ও ঈমানকে মজবুত করতে এবং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার নৈকট্য লাভ করতে কিয়ামুল লাইলের চেয়ে কার্যকর কিছুই নেই। মাহে রমজানে একনিষ্ঠভাবে রাতের নামাজে মনোযোগী হওয়া এবং এশার সময় তারাবিহ নামাজে অংশ নেওয়া প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। সূত্র:বার্তা২৪।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION